Breaking News
  • টাইমসের বর্ষসেরার তালিকায় আইএস প্রধান!
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পৃথক দুটি ঘটনায় একদিনে দুই মহিলার লাশ উদ্ধার
  • নির্বাচনী প্রচারণায় খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় থাকবে পুলিশ
  • নিজামীর আপিলের রায় ৬ জানুয়ারি
  • দাম্পত্য কলহে বিপর্যস্ত হওয়ার শঙ্কা কন্যার

ধনী গরিবের বৈষম্য দূর করণের হাতিয়ার যাকাত

নিউজবাংলা: ০৭ ডিসেম্বর- সোমবার:

আবুল কাশেম:

পথে ঘাটে, অলি-গলি, বাসে সর্বত্র ভিক্ষুকদের পদচারণা। শুধু ভিক্ষুকই নয়, বিভিন্ন সময় যাকাত ও ফিতরার টাকা সংগ্রহে অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও এতিমখানাও চেষ্টা করে থাকে ।

দেশের সর্বত্র মোড়ে মোড়ে এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনেক কর্মী বসে পড়েছে টেবিল, ব্যানার, মাইকের পসরা সাজিয়ে। পথের ধারে বসে থাকা, শুয়ে থাকা কচি ছেলে মেয়ে সহ মা’দের দেখলে মনে হয় এরা ভিক্ষার থলে নিয়ে বিলাসিতায় জীবন রাঙাতে পা রাখেনি। জীবন বাস্তবতার ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে তারা এপথে এসেছেন। ভিক্ষার থলে নিয়ে ঘুরছেন বিত্তশালীদের ধারে ধারে। পথে জ্যাম যানজট পড়লেই উত্তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে কড়া নাড়ছেন গাড়ির গ্লাসে। সওয়াব পেতে দুই চার পাঁচ টাকা দিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন ধনীরাও। সন্তুষ্ট ভিক্ষুকরাও। অন্তত দু’এক টাকা দান করে মানষিক শান্তিও তো পাওয়া যাবে। ভিক্ষুকদের নিয়ে অনেক মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মপূজা করে এরা ভিক্ষা করে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে মিডিয়ায়। ভিক্ষা করতে একটি চক্র নেমে পড়েছে বলেও অনেকের দাবি। মিডিয়ার কথাগুলো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এসব ভিক্ষুক, ধর্মপ্রতিষ্ঠান, ও চক্ররা তো আমাদের সমাজেরই মানুষ। তারা কোনো ভিনগ্রহ থেকে রাজধানীতে উড়ে আসেনি। তারা আমাদের সমাজেরই মানুষ, আমাদের সমাজেরই সমস্যা, আমাদের সমাজেরই অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র। দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের মত উন্নত নয়, এ দেশে ভিক্ষুকরা প্লেনে চড়ে ভিক্ষা করতে আসবে। ভিক্ষুকদের এ চিত্র দেশের ধনীদের তৈরি একটি ফল। যা আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি। ক্ষমতাশীল সরকার রাজধানীকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে ও ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে নানা উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। ভিক্ষুক তাড়িয়ে তো আর ভিক্ষাবৃত্তি দূর করা যায় না। ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দেবো কোথা’ প্রবাদের মতই বিষয়টি। মধ্যআয়ের দেশ বলে সম্মান অর্জন হলেও এ দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে সমুদ্র পাড়ি দিতেও ভয় করছে না যুবকরা। উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করে বেকার হাজার হাজার যুবক। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা। সহায় সম্বলহীন কর্মসংস্থান তৈরিতে নেই বিশেষ কোনো উদ্যোগ। এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও দেশের বিত্তশালীদের ভ‚মিকা অপ্রতুল। দেশের টাকা পড়ে আছে সুইস ব্যাংকের একাউন্টে। নেই সমাজ ও দেশের উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ। উদ্যোগ দূরে থাক, এ দেশের গরীবদের হক পর্যন্ত আদায় করছে না বিত্তশালীরা। ধনী গরীবের এ বৈষম্য দূর করতে যাকাতেরও হচ্ছে না সুষ্ঠু বণ্টন। দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে বাস্তবমুখী সমাধান দিয়েছে ইসলাম। এ যাকাত বাস্তবায়ন করেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আর্থিক সমতা বজায় রয়েছে। তুলনামূলক মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র খুব একটা নজরে আসে না। এর মূল কারণ যাকাত প্রদান ও যাকাতের সুষ্ঠু বণ্টন। মুহাম্মদ সা. যাকাতের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিয়েছেন। তাঁর খলিফারাও এ নীতি বাস্তবায়ন করে ভিক্ষুকমুক্ত করেন দেশকে। ইসলামি ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হযরত ওমর রা. এর যুগে দেশে যাকাত প্রদানের মত মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত না । ইসলামি নীতিতে যাকাতের টাকার মালিক বিত্তশালীরা নয়, গরীব ও দারিদ্র শ্রেণির মানুষরাই। অথচ তারাই বঞ্চিত যাকাতের অর্থ থেকে। যাকাতের গুরুত্ব ও সম্পদ কুক্ষিগত রাখার ব্যাপারে কোরআনে কঠোর ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে। সুতরাং এখন আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।’ মুহাম্মদ সা. বলেন, যাকে আল্লাহ তায়ালা ধনসম্পদ দান করেছেন, আর সে তার যাকাত আদায় করেনি কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে তার জন্যে একটি টাকপড়া সাপ স্বরুপ করা হবে, যার চক্ষুর ওপর দুটি কালো দাগ থাকবে। ওই সাপকে কিয়ামতের দিন তার গলার বেড়ি স্বরুপ করা হবে। সাপটি নিজ মুখের দুই দিক দ্বারা তাকে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সংরক্ষিত অর্থ’। ইসলাম যাকাতের গুরুত্ব উল্লিখিত দু’ আয়াত ও হাদিস দ্বারাই বোঝা আসে। ভিক্ষাবৃত্তি, সমাজ পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করণে যাকাত প্রদান ও যাকাতের সুষ্ঠু বণ্টন প্রয়োজন। আগামীর এক স্বপ্নীল উন্নত রাষ্ট্র গঠনে প্রয়োজন সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন।

 

নিউজবাংলা/একে

Share This:

Comments

comments

Previous: নাস্তিকরাও বিপদে পড়লে ‘আল্লাহ’ ডাকে
Next: আত্রাইয়ে ফেনসিডিলসহ যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*