Breaking News
  • বরিশালে অপহৃত দুই কলেজছাত্রী উদ্ধার
  • সংসদে খুনিরা ঢুকে পড়লে সংসদের নিরাপত্তা কোথায়, প্রশ্ন রিজভীর
  • কাল দক্ষিণ কোরিয়া যাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী
  • সরকারের অভ্যন্তরে আতঙ্ক এখন চরমে: নোমান
  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ছে ব্রিটেন

ভাঙন আতংকে সাতক্ষীরার ৩০ হাজার মানুষ

নিউজবাংলা: ২৪ জুন, শুক্রবার:

নূরুজ্জামান রিকো, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :

“রাতে ঘুম হয় না। পাঁচ পাঁচ বার আমার ঘর ভেঙে চলে গেছে খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে। এবার ভাঙলে আর যাওয়ার জায়গা থাকবে না। কিন্তু দেখার কেউ নেই। ভেঙে ভেসে গেলে ওরা চিড়ে মুড়ি নিয়ে আসে, আমাদের ত্রাণ দরকার নেই, বাধ ঠিক করে দাও।”

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আইলাদুর্গত দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুরের বৃদ্ধ দেবেন্দ্র নাথ মন্ডল (৮৫) এভাবেই জরাজীর্ণ খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাধের বর্ণনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এই ওয়াপদা আগে ২০/২৫ হাত চওড়া ছিল। ভাঙতে ভাঙতে এখন ২/৩ হাত আছে। যেকোন সময় তাও ভেসে যেতে পারে।”

জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাস আইলায় ল-ভ- হয়ে যায় গোটা উপকূলীয় এলাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল উপকূলীয় এবং কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর প্রায় ৩৪ কিলোমিটার বাধ বেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুর। বাধ ভেঙে ল-ভ- হয়ে গিয়েছিল গোটা ইউনিয়ন। পরে কোন মতে বাধ সংস্কার করা হয়। কিন্তু প্রায় ভাঙনের কবলে পড়ে জীর্ণশীর্ণ বাধ। আর তাতে নুতন করে বিপর্যস্ত হয় ইউনিয়নের ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবনযাত্রা। ম্লান হয়ে যায় সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকা-।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাপা, কামালকাটি, চাউলখোলা, চন্ডিপুর, বন্যতলা, পাতাখালীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বেড়িবাধ ভেঙে কোথাও দুই ফুট, কোথাওবা তিন ফুট অবশিষ্ট রয়েছে। যা জোয়ারের তোড়ে যেকোন সময় ভেঙে গোটা ইউনিয়ন প্লাবিত হতে পারে। ভাঙন আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকার মানুষ।

ঝাপা গ্রামের উত্তর কুমার মন্ডল জানান, আইলার পর সাত বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী বেড়িবাধ নির্মাণে আজও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বেড়িবাধ ভাঙলেই যেনতেনভাবে সংস্কার করা হয়। কিন্তু তার আগেই নষ্ট হয়ে যায় সব খাদ্য শস্য, মৎস্য সম্পদসহ ঘরবাড়ি।

কামালকাটি গ্রামের শিক্ষক অসীম কুমার মন্ডল জানান, বেড়িবাধ ভাঙলে ইউনিয়নের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ সব ভেসে যায়। নষ্ট হয়ে যায় সব অবকাঠামো। জলে চলে যায় সরকারের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকা-।

স্কুল শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম জানান, ওয়াপদা ভাঙলে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। আমরা স্কুলে যেতে পারিনে। বই খাতা সব ভেসে যায়।

বন্যতলা গ্রামের পুলিন চন্দ্র মন্ডল জানান, গ্রামের কয়েকটি পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখনই সংস্কার করা সম্ভব না হলে এলাকা ছাড়তে হবে, ভিন্ন কোন উপায় থাকবে না।

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান জানান, ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে দু’এক জায়গায় বালু ভর্তি বস্তা ফেলে কোন মতে ঠেকনি দেওয়া হয়েছে। বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা সত্ত্বেও দৃশ্যত কোন পদক্ষেপ আজও চোখে পড়েনি।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে জিআই বালু ভর্তি বস্তা ফেলে ডামপিং করা সম্ভব হলে বাধ টেকসই হতে পারে। এতে খরচও কম হবে। কিন্তু বাধ একবার ভেঙে গেলে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও কূল পাওয়া যাবে না।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ ন ম গোলাম সারওয়ার জানান, পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পোল্ডার ৭/১ এর আওতাভুক্ত। আমরা প্রতি সপ্তাহে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করছি। সেখানকার খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাধের বর্তমান অবস্থা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বাজেটের স্বল্পতা রয়েছে। বাজেট পেলে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। ##

নিউজবাংলা/ একে         

 

Share This:

Comments

comments

Next: এপিবিএন এর অভিযান: বিপুল পরিমান গাঁজা ও ইয়াবা উদ্ধার : ৫ মাদক ব্যবসায়ী আটক

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*